তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন আশাবাদ
https://www.facebook.com/pinjory.biswas নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনা
তৈরি হয়েছে। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পিত দিল্লি সফরের
সময় তিস্তা চুক্তি সই হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র
প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আড়াই বছর পূর্তি
উপলক্ষে গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এম জে আকবর
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা
চুক্তির সম্ভাবনা আছে। আমরা এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্যের চেষ্টা চালাচ্ছি।
বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের মতৈক্যের ব্যাপারে আমরা
আশাবাদী।’
অথচ কয়েক মাস ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিক্ততা ক্রমেই বাড়ছে।
তাঁদের এই দ্বৈরথ তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎকে গত কয়েক মাসে ক্রমেই অনিশ্চিত
করে তুলেছে। এই অনিশ্চয়তা গত ডিসেম্বরের শেখ হাসিনার পরিকল্পিত ভারত সফর
পেছানোতেও ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। অবশ্য সফর
পেছানোর ক্ষেত্রে সময়সূচির জটিলতার বিষয়টিকে কারণ হিসেবে দেখাতে চেয়েছে দুই
পক্ষ। এমন এক পরিস্থিতিতে এম জে আকবরের বক্তব্য তিস্তা নিয়ে নাটকীয় মোড়
পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না হলেও
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শেখ হাসিনার ভারত সফর আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে
ব্যস্ত দুই দেশ। এই সফরের সময় নিরাপত্তা সহযোগিতার এক নতুন রূপরেখার ঘোষণা
দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ভারত। এ জন্য ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার একটি
চুক্তি সই করারও প্রস্তাব দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ দমনে দুই দেশের সামর্থ্য
বাড়ানোসহ বিভিন্ন উপাদান থাকছে এই প্রস্তাবে। শেষ পর্যন্ত ‘সদিচ্ছার
স্মারক’ হিসেবে নিরাপত্তা নিয়ে একটি ঘোষণা আসতে পারে।
তিস্তা নিয়ে এম জে
আকবরের সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি ও কলকাতার কূটনৈতিক
সূত্রগুলোতে যোগাযোগ করা হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে, তিস্তা নিয়ে এ মুহূর্তে
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুতি আগের চেয়ে বেশ ভালো। বিশেষ করে তিস্তার
পানিপ্রবাহের নানা বিশ্লেষণসহ প্রয়োজনীয় উপাত্তগুলো এখন তাদের হাতে রয়েছে।
ফলে পানি ভাগাভাগির হার ঠিক করে বাংলাদেশের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি করা ভারতের
জন্য আগের তুলনায় অনেকটা সহজ।
কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের টানাপোড়েন সম্পর্কে জানতে
চাইলে ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, সারদা কাণ্ড নিয়ে দুই পক্ষের
মধ্যে যে তিক্ততার শুরু, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল এবং রোজভ্যালি
প্রসঙ্গকে ঘিরে তা এখন চরম পর্যায়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিস্তা নিয়ে মমতাকে
রাজি করানো অনেকটাই কঠিন। কাজেই এ অবস্থায় মমতাকে পাশে নিয়ে মোদির পক্ষে
তিস্তা চুক্তি সই করাটা প্রায় অসম্ভব। প্রসঙ্গত, সারদা ও রোজভ্যালি নামে
দুটি ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করায় এ নিয়ে
ভারতজুড়ে হই চই পড়ে যায়।
বিজেপি নেতৃত্বের চিন্তা হচ্ছে, তিস্তা নিয়ে মমতাকে রাজি
করাতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। এতে যদি
তিনি রাজি না হন বিকল্প ভাবনাও আছে বিজেপির। নরেন্দ্র মোদি শেষ মুহূর্তে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উপেক্ষা করেই বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করে ফেলতে
পারেন।
জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে
বলেন, গজালডোবা ব্যারাজটি এখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প। তাই
কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে এককভাবে বাংলাদেশের
সঙ্গে চুক্তিটি সই করতে পারে। এখন চুক্তিটি যে জায়গায় আটকে আছে, সেটি
তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন এমন
একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, অভিন্ন নদীটির চুক্তি যেখানে
আটকে আছে তার সঙ্গে কারিগরি কোনো বিষয় নয়, রাজনীতি জড়িত। তাই রাজনৈতিক
নেতৃত্ব যদি এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন, তবে চুক্তি সইয়ে কোনো বাধা
থাকবে না। তা ছাড়া যেখানে গিয়ে শেষ মুহূর্তে তিস্তা চুক্তি সই আটকে
গিয়েছিল, সেটি ভারত পরে পর্যালোচনা করে দেখেছে। ওই পর্যালোচনায় দেখা গেছে,
যেভাবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরি হয়েছে, তা দুই পক্ষের জন্য সহায়ক
হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, স্থলসীমান্ত চুক্তি
বাস্তবায়নের জন্য ভারতের পার্লামেন্টে বিল সংশোধনের আগে তিস্তা নিয়ে ভারতের
কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা হয়েছিল। বিশেষ করে বিজেপির নেতৃত্বাধীন
এনডিএ সরকার এ বিষয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে তিস্তার ব্যাপারে মমতার
অবস্থান নিয়ে কথা বলেছিল। ওই সময় রাজনৈতিক মহল থেকে মত এসেছিল, মমতা
চুক্তিটিতে বাধা দিতেই থাকবেন। কাজেই তাঁকে ছাড়াই চুক্তি করার ক্ষেত্রে
এগিয়ে যাওয়া উচিত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মোদির সরকার সীমান্ত চুক্তি আগে
বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের জুনে বাংলাদেশ সফরের সময় নরেন্দ্র
মোদি তিস্তা চুক্তি সইয়ের জন্য শেখ হাসিনার কাছে সময় চেয়েছিলেন। ফলে এবার
শেখ হাসিনা দিল্লি এলে তিনি যদি আবার সময় চান তবে তা বাংলাদেশকে আশাহত করতে
পারে। তাই বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আস্থা আরও জোরদার করতে
এবার সুনির্দিষ্ট কিছু করতে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ভারত।
জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবীর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে
বলেন, ভারতের শাসনব্যবস্থায় কোনো দেশের সম্পর্ক বজায় রাখার এখতিয়ার
কেন্দ্রীয় সরকারের। আবার দেশটির শাসনপ্রক্রিয়া অনুযায়ী কোনো দেশের সঙ্গে
চুক্তি করার সময় রাজ্য সরকারকে পাশে রাখারও একটি বিধান রয়েছে। তবে যেকোনো
চুক্তি সই করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কাজেই ২০১১ সালে যে কাঠামোতে দুই দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত
হয়েছিল, সেই অনুযায়ী চুক্তি সই হলে বাংলাদেশের জনগণ তাকে স্বাগত জানাবে।